লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল পাঁচ নবীন ফ্রিল্যান্সারের কথা

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। দেশের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার নিয়মিত কাজ করছেন। জ্ঞানভিত্তিক আউটসোর্সিংয়ের কাজে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২০১৭ সাল থেকে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’(এলইডিপি) নামে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে।

এলইডিপি প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণ-তরুণী নিজ উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে এলইডিপি-২০২০ লট-০২ এর সফল পাঁচজন তরুণ-তরুণীর গল্প থাকছে।

আমি এখন এলাকার তারুণ্যের আইকন – রাসেল, রংপুর

রাসেল পড়ছেন রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে, কম্পিউটার টেকনোলজি নিয়ে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে। ২০২০ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কথা জেনে আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষায় পাস করার পর অনলাইন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয় ২০২০ সালের মে মাসে। রাসেলের প্রশিক্ষণটি ছিল গ্র্রাফিক্স ডিজাইনের উপর। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে হাইপারট্যাগ সলুশনস লিমিটেড। ৫০টি ক্লাস সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। প্রশিক্ষণের পর মেন্টরিং সেন্টারে আরও ১০টা ক্লাস হয়েছে রাসেলের। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে অনলাইন আউটসোর্সিংয়ের কাজের জায়গা ফাইভারে অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। এর এক মাস পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ ডলারের একটা কাজ পান। এখন প্রতি মাসে ১০–১৫ টি কাজ করছেন এবং তার নির্দিষ্ট কিছু কাজদাতা আছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ পর্যন্ত ১৫০০ ডলারেরও বেশী আয় করেছেন তিনি। এখন কাজ করছেন ফাইভার এবং আপওয়ার্কে। রাসেল বলেন, “আমি পেওনিয়ার এবং পেপালের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাংক থেকে টাকা তুলি। শুরুতে ইংরেজি নিয়ে অসুবিধা হয়েছিল। নিয়মিত চর্চা এবং প্রশিক্ষকের সহায়তায় সমস্যাটির সমাধান হয়ে যায়।” শিক্ষানবিশ অবস্থায় ইনকাম করতে পেরে রাসেল নিজেকে সফল মনে করেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেকেই এখন আউটসোর্সিং শেখার জন্য আগ্রহী। করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এম.পি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এম.পি, এলইডিপি প্রকল্পের মাননীয় প্রকল্প পরিচালক আক্তার মামুন, এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হাইপারট্যাগ সলুশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিউল আলম মহোদয়ের প্রতি । রাসেল ফ্রিল্যান্সিংকে তার ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভবিষ্যতে রাসেলের ইচ্ছা আছে একটা স্টার্টআপ উদ্যোগ চালু করার।

মো. রাসেল মিয়া
ব্যাচ কোডঃ ৩৭১
রেজি. নম্বরঃ ২১০৫৮৭
রংপুর

সংসার সামলানোর পাশাপাশি আউটসোর্সিং করি – শবনম, রংপুর

রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজে দর্শন বিভাগ নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন শবনম। অনেকের কাছে আউটসোর্সিং সর্ম্পকে জানতে পারলেও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি যে অনলাইনে কাজ করে ইনকাম করা সম্ভব। হঠাৎ ফেসবুকে ২০২০ সালে বিজ্ঞাপন দেখেন যে সরকারি উদ্যোগে এলইডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিং শিখানো হবে। এরপর রেজিস্ট্রেশন করেন গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়ে তাকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয় ২০২০ সালের মে মাসে। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে হাইপারট্যাগ সলুশনস লিমিটেড। অনলাইনে ৫০টি ক্লাস সম্পূর্ণ করেছিলেন তিনি। অনলাইন আউটসোর্সিংয়ের কাজের জায়গা ফাইভারে অ্যাকাউন্ট খোলেন প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে। এরপর প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়েই ২০ ডলারের প্রথম কাজটি পান ইউএসের এক বায়ারের কাছ থেকে। সংসার সামলানোর পাশাপাশি আউটসোর্সিং এর কাজ করে তিনি আজ স্বাবলম্বী। এখন প্রতি মাসে ১০–১৫ টি কাজ পান ফাইভার থেকে। এখন পর্যন্ত ৩০০ ডলারের ও বেশী আয় করেছেন তিনি। শবনম ফ্রিল্যান্সিংকে তার ভবিষ্যৎ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এম.পি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এম.পি, এবং এলইডিপি প্রকল্পের মাননীয় প্রকল্প পরিচালক আক্তার মামুন মহোদয়ের প্রতি।

মোছাঃ শবনম পারভীন
ব্যাচ কোডঃ ৩৭২
রেজি. নম্বরঃ ১৬৯৮২৮
রংপুর

পড়াশুনা শেষ করে বেকার না থেকে অনলাইনকে বেছে নিয়েছি – উম্মে রিফাতুন জান্নাত, লালমনিরহাট

উম্মে রিফাতুন জান্নাত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিষয় নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন। আগে থেকে কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা ছিল, অনেক চেষ্টাও করেছিলেন কিছু করার, কিন্তু পারেননি। ফেসবুকে ২০২০ সালে বিজ্ঞাপন দেখেন সরকারি উদ্যোগে এলইডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিং শিখানো হবে। এরপর রেজিস্ট্রেশন করেন ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য । সাক্ষাৎকার নিয়ে তাকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে হাইপারট্যাগ সলুশনস লিমিটেড। অনলাইনে ৫০টি ক্লাস সম্পন্ন করেছিলেন তিনি । অনলাইন আউটসোর্সিংয়ের কাজের জায়গা ফাইভার এবং ফ্রিল্যান্সার ডটকমে অ্যাকাউন্ট খোলেন প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে। তিনি বলেন, “যাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাঁরা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে কাজ খুঁজতে হবে, আবেদন করতে হবে। এসব জানার পর আমি বিড করা শুরু করি।” ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ১৫–২০ টা কাজ বিড করার পর প্রথম কাজ পান জান্নাত, সেটা ৫০ ডলারের। শুরু হয় জান্নাতের এক নতুন পথচলা। এছাড়াও ফাইভারে নিয়মিত কাজ করেন জান্নাত। প্রায় ৩০০টি অর্ডার সম্পন্ন করেছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয় জান্নাতের । প্রশিক্ষণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫০০ ডলারের বেশি আয় করেছেন তিনি। জান্নাত নিজেই নিজের খরচ চালান । জান্নাত বলেন, “পড়াশুনা শেষ করে বেকার না থেকে অনলাইনকে বেছে নিয়েছি। ভবিষ্যতে বড় একটা অফিস নেব, যেন আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি।”

মোছাঃ উম্মে রিফাতুন জান্নাত
ব্যাচ কোডঃ ৩৬১
রেজি. নম্বরঃ ২৭৪০৬৯
লালমনিরহাট

পরিবারকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে অনেক ভালো লাগে – রফিকুল, কুড়িগ্রাম

রফিকুল কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসায় ফাজিল বিভাগে ২য় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন যে সরকারি উদ্যোগে এলইডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিং শিখানো হবে। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কখনো আশা ছাড়েনি। এরপর রেজিস্ট্রেশন করেন ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়ে তাকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে হাইপারট্যাগ সলুশনস লিমিটেড। অনলাইনে ৫০ টি ক্লাস সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। অনলাইন আউটসোর্সিংয়ের কাজের জায়গা ফাইভার এবং ফ্রিল্যান্সার ডটকমে অ্যাকাউন্ট খোলেন প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে। রফিকুল বলেন, ‘শুরুর দিকে এক মাস ধরে কাজ দাতাদের রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রথম সাড়া দেন। তাঁর একটা এসইওয়ের (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) কাজ ছিল।’ সেখান থেকেই শুরু। প্রশিক্ষণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০ ডলারের ও বেশি আয় করেছেন তিনি। এ জন্য রফিকুলকে ৯০–এর ও বেশি কাজ করতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি ফাইভার ছাড়াও আরো অনেক মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া,নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশ থেকে কাজ পান। রফিকুল বলেন, ‘শুরুর দিকে কাজের ভালো জন্য ল্যাপটপ ছিল না। পরে নিজে উপার্জন করে ভালো একটি ল্যাপটপ কিনেছি। ছোট ভাইবোনদের ছাড়াও এলাকায় কিছু তরূণদের কাজ শিখাচ্ছি। পরিবারের সবাই এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে। পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পেরে নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগে।’ রফিকুল ভবিষ্যতে নিজের কাজের পরিসর আরও বাড়াতে চান এবং সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন।

মো: রফিকুল ইসলাম
ব্যাচ কোডঃ ৪৯৪
রেজি. নম্বরঃ ২৮৬৯৯৩
কুড়িগ্রাম

উপার্জনের অন্যতম পন্থা ফ্রিল্যান্সিং – শওকত, গাইবান্ধা 

শওকত সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেছেন। পড়াশুনা শেষ করে অনেকদিন যাবৎ চাকরি না পাওয়ায় তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। আগে থেকে কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা ছিল, অনেক চেষ্টাও করেছিলেন কিছু করার, কিন্তু সম্ভব হয়ে উঠেনি। তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, সরকারি উদ্যোগে এলইডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আউটসোর্সিং শিখানো হবে। এরপর তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সটি শেখার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন অনলাইন পোর্টালে। কিছুদিন পর তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয় এবং তাকে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়। এই প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করে হাইপারট্যাগ সলুশনস লিমিটেড। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈদ্যুতিক সমস্যা ও নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেও শওকত অনলাইনে ৫০টি ক্লাস সম্পন্ন করেছিলেন। এরই ফল হিসেবে প্রশিক্ষণ চলাকালীন অবস্থাতেই তিনি ত্রিশ (৩০) দিন পর প্রথম অর্ডার পান ফাইভার থেকে। এরপর থেকে ফাইবার এবং আপওয়ার্কে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন শওকত। তিনি এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস থেকে ৫০ টি অর্ডারের মাধ্যমে ৫০০ ডলারের ও বেশি ইনকাম করেছেন। এখন তার মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা। এখন তিনি নিজেই নিজের খরচ চালান এবং পরিবারকে সাহায্য করেন। এখন পরিবারের লোকজন তাকে আর বোঝা হিসেবে মনে করেন না। শওকত বলেন, “আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটা আর্থিক থেকে মানসিক বেশি। এখন সবকিছু সহজ মনে হয়। আমার পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুরা বলেছিল এগুলো হবে না, সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়-এখন তাদের ধারণা বদলে গেছে।তাই আমি মনে করি উপার্জনের অন্যতম পন্থা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং।”

আবু লায়েস মো. শওকত ওসমান
ব্যাচ কোডঃ ৫৩১
রেজি. নম্বরঃ ২৩৮২১১
গাইবান্ধা